Smart Citizen Card:— আপনি কি ভারতের নাগরিক (Indian Citizen)? নাগরিকত্ব প্রমাণে দেশজুড়ে এখন অলিখিতভাবে হলেও এই প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। তার কারণ, জাতীয় নির্বাচন কমিশন (National Election Commission) একের পর এক রাজ্যে অর্থাৎ দেশজুড়েই স্পেশাল ইনটেনসিভ রিভিশন (Special Intensive Revision) বা SIR প্রক্রিয়া চালু করতে চলেছে।
আর এর ফলে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে, ভোটার হলেও কি সে ভারতের নাগরিক নয়? আবার উল্টোদিকে ভারতবাসী হলেই সে ভোটার, এটাও যেমন জাতীয় নির্বাচন কমিশনের তরফেই দীর্ঘদিন ধরেই প্রচার করা হতো। সমস্ত মিডিয়ায় বড় বড় হরফে লেখা থাকতো, ভারতের একজন মানুষ যেন গণতান্ত্রিক অধিকার বা ভোটের অধিকার থেকে বঞ্চিত না হয়।
কিন্তু বর্তমানে যখন SIR প্রক্রিয়া চালু করতে চলেছে নির্বাচন কমিশন, তখন প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে, ভারতের নাগরিকত্ব প্রমাণে কোন কোন নথির প্রয়োজন? জাতীয় নির্বাচন কমিশন নাগরিকত্ব যাচাইয়ের কাজ করছে না। এটা যেমন ঠিক, তেমনি একজন ব্যক্তির ভোটাধিকার প্রয়োগের ক্ষেত্রে দেশের নাগরিকত্বের প্রশ্নটিও উঠে আসে। এতদিন পর্যন্ত কোনোদিনই ভারতের নাগরিকত্ব নিয়ে আলাদা কোনো ব্যবস্থা চালু ছিল না। এবার চালু হতে চলেছে নয়া সেই ব্যবস্থা।
ভারতবর্ষে চালু ব্যবস্থাটি কি?
এতদিন পর্যন্ত ভারতের দেশবাসী, একজন বাসিন্দা হিসেবে যে ডকুমেন্টগুলো বিভিন্ন কাজে-কর্মে প্রয়োজন হতো, বিশেষ করে সরকারি ক্ষেত্রে, এমনকি বেসরকারি ক্ষেত্রেও নিজেকে প্রমাণ করা বা নিজের আইডেন্টিটি প্রুফ করার জন্য, সেগুলি হল– আধার কার্ড, ভোটার আইডি, পাসপোর্ট কিংবা বার্থ সার্টিফিকেট।
আবার, আর্থিক লেনদেন (Banking Transaction) সংক্রান্ত বিষয় হলে প্যান কার্ড, তো একেবারে নিশ্চিত ছিল। কিন্তু অন্যান্য দেশে নাগরিকত্ব প্রমাণের জন্য আলাদা কার্ড রয়েছে। আমাদের দেশে এই ধরনের কার্ডের ব্যবস্থা চালু ছিল না। এবার সেই সমস্যার অবসান ঘটানোর জন্য কেন্দ্রীয় সরকারের তরফে এক যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত নেওয়া শুরু হয়েছে। এই প্রতিবেদনে সেই বিষয়েই বিস্তারিত জানানো হবে।
কি সেই বৈপ্লবিক সিদ্ধান্ত?
২০২৫ সালে এই প্রথমবারের মতো কেন্দ্রীয় সরকার স্মার্ট সিটিজেনশিপ কার্ড (Smart Citizenship Card) চালু করতে চলেছে। যা কিনা প্রতিটি ভারতীয়ের নাগরিকত্ব প্রমাণ করবে। এই কার্ড থাকার অর্থই তিনি ভারতের নাগরিক।
শুধু তাই নয়, নিজের আইডেন্টিটি হিসেবেও যেকোনো সরকারি এবং বেসরকারি ক্ষেত্রে দেশজুড়ে যেকোনো ধরনের কাজ—
তা চিকিৎসা ক্ষেত্রেই হোক বা শিক্ষা ক্ষেত্রে, চাকরি, আর্থিক লেনদেনসহ বিদেশে ভ্রমণের ক্ষেত্রেও অর্থাৎ সমস্ত ক্ষেত্রেই নাগরিকত্ব নিশ্চিত করা যাবে এই কার্ডের মাধ্যমে।
তাহলে এক কথায় বলা যেতে পারে, কেন্দ্রীয় সরকার যে Smart Citizenship Card চালু করতে চলেছে, তাই হবে ভারতের নাগরিকত্ব প্রমাণের মূল চাবিকাঠি।
বর্তমানে দেশের নাগরিকত্ব প্রমাণের কি নিয়ম রয়েছে?
Indian Citizenship Present Rules— সবথেকে প্রথমেই বলা যেতে পারে ভারতের নাগরিকত্ব পাওয়ার জন্য যে আইন রয়েছে, সেগুলি নিয়ে মাঝে মধ্যেই অনেক জটিলতা তৈরি হয়। কারন ভারতের মতো দেশে প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলে বা প্রান্তিক এলাকায় প্রান্তিক শ্রেণীর মানুষদের বার্থ সার্টিফিকেট বা জন্ম বৃত্তান্ত সংক্রান্ত কোনো ডকুমেন্ট নেই, অথবা যারা দীর্ঘদিন আগে জন্মগ্রহণ করেছেন, অন্তত আজ থেকে ৩০-৪০ বছর আগে, তাদের ক্ষেত্রেও এই ধরনের কোনো কাগজ দেখা যায় না।
যেমন উদাহরণস্বরূপ বলা যেতে পারে— ১৯৫০ সাল থেকে ১৯৮৭ সাল পর্যন্ত ভারতে জন্মালে তিনি সরাসরি ভারতের নাগরিক হিসেবে গণ্য হবেন।
আবার— ১৯৮৭ সাল থেকে ২০০৪ সাল পর্যন্ত নিয়মে বলা রয়েছে, ভারতের নাগরিকত্ব পাওয়ার জন্য বা নাগরিক হিসেবে প্রমাণ করার জন্য বাবা বা মায়ের একজন ভারতীয় হলেই চলবে। ২০০৪ সালের পর আবার নিয়ম বদলে গিয়ে ভারতের নাগরিক হিসেবে প্রমাণ করার জন্য বাবা মা দুজনকেই ভারতের নাগরিক হতে হবে।
এ তো গেল পূর্ববর্তী নিয়ম বা আইনের কথা। কিন্তু ১৯৮৭ থেকে ২০০৪ এর মধ্যে পরিবারের বা তাদের বাবা-মায়ের অনেকেরই বার্থ সার্টিফিকেট বা জন্ম শংসাপত্র নেই। তাই এক্ষেত্রে তারা নাগরিকত্ব প্রমাণ করার জন্য বিভিন্ন সমস্যার সম্মুখীন হবেন। সেই জায়গায় নাগরিকদের সুরক্ষার জন্য এই স্মার্ট সিটিজেনশিপ কার্ড একমাত্র সহায়ক হবে বলেই মনে করা হচ্ছে।
এবং এই ক্ষেত্রে প্রতিটি মানুষেরই অন্তর্ভুক্ত করার চেষ্টা করা হচ্ছে। আন্তর্জাতিক মানের নিরাপত্তা ব্যবস্থা অর্থাৎ International Security System পুরোপুরি থাকবে এই কার্ডের ডেটা সুরক্ষায় রাখার জন্য।
স্মার্ট সিটিজেনশিপ কার্ডে কি থাকতে পারে?
প্রথমেই বলে রাখা দরকার— এই কার্ড একদম নয়া প্রযুক্তিতে তৈরি করা ‘একটি ডিজিটাল সিকিউরিটি সক্ষম নাগরিকত্বের প্রমাণ‘।
- এই স্মার্টে সিটিজেনশিপ কার্ডে ব্যক্তির নাম, ছবি এবং সই থাকবে।
- জন্ম তারিখ, জন্মস্থান এবং প্রত্যেক ব্যক্তির আলাদা Unique Citizenship Number থাকবে।
- নাগরিকত্ব যাচাইয়ের জন্য বায়োমেট্রিক ডেটা সংযুক্তি থাকবে।
- QR Code স্ক্যান করে জানা যাবে এই স্মার্ট কার্ডধারী ভারতের নাগরিক কিনা।
- ডিজিটাল চিপ এবং QR কোড যুক্ত থাকবে, তার সঙ্গে হলোগ্রাফিক সিকিউরিটি ফিচার থাকবে।
ভারতের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের তরফে জানানো হয়েছে, এই সিটিজেনশিপ কার্ডের আওতায় আনার মূল লক্ষ্যই হলো, নাগরিকত্ব যাচাই-এর প্রক্রিয়া সহজ হবে এবং অবৈধ অনুপ্রবেশকারীদের শনাক্ত করার ক্ষেত্রে যথেষ্ট সুবিধা হবে। তাতে আসল ভারতীয় নাগরিকরা কোনো রকম হয়রানির সম্মুখীন হবেন না।
তাহলে এই সিটিজেনশিফ কার্ড কবে নাগাদ চালু হতে চলেছে?
Citizenship Card Starting Date— এই বছর অর্থাৎ ২০২৫ সালের শেষের দিকেই বেশ কয়েকটি রাজ্যে স্মার্ট কার্ডের ট্রায়াল রান শুরু করা হবে। সেই ট্রায়াল রান যদি সফল হয় তাহলে ২০২৬ সালে দেশ জুড়ে এটি কার্যকর করা হবে। এবং সেই প্রক্রিয়ার শেষ ধাপে প্রতিটি নাগরিককে বিনামূল্যে এই কার্ড দিয়ে দেওয়া হবে।
স্মার্ট সিটিজেনশিপ কার্ডের জন্য কিভাবে আবেদন করবেন?
How to Apply for Smart Citizenship Card— প্রথমেই বলে রাখা দরকার এখনো পর্যন্ত যেহেতু এর কোনো সম্পূর্ণ সরকারি নির্দেশিকা জারি হয়নি। তাই অনুমান করা হচ্ছে, আধার কার্ড যেভাবে তৈরি করা হয়েছিল অনেকটা সেই পদ্ধতিতে হতে পারে।
- দেশবাসীরা সরকারি অফিস অথবা অনলাইনে আবেদন করতে পারবেন।
- জন্ম তারিখ, রেসিডেন্সিয়াল প্রুফ এবং আইডেন্টিটি জমা দিতে হবে।
- বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে প্রমান এবং ছবি সংগ্রহ করা হবে।
- আর এরপরেই ব্যক্তি বা আবেদনকারীর কাছে এই সিটিজেনশিপ কার্ড পৌঁছে যাবে।
কেন প্রয়োজন স্মার্ট সিটিজেনশিপ কার্ড?
বর্তমানে দেশের অবাঙালি রাজ্যগুলিতে বিভিন্ন সময়ে বাঙালিদের হেনস্তা, অত্যাচার এবং অপমানের সম্মুখীন হতে হচ্ছে বলে একাধিক অভিযোগ জমা পড়েছে। এক্ষেত্রে বাংলা জুড়েও এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ সংগঠিত হচ্ছে। এই ধরনের কার্ড থাকলে এরকম কোনো সমস্যা আগামী দিনে হবে না বলেই মনে করছে কেন্দ্রীয় সরকার।
অন্যান্য দেশে নাগরিকত্ব প্রমাণের কার্ড থাকলেও ভারতে এতদিনে এই নিয়ম ছিল না। কেন্দ্রীয় সরকারের তরফে স্মার্ট সিটিজেনশিপ কার্ডকে একক সমাধান হিসেবে তুলে ধরার চেষ্টা করা হচ্ছে। এক্ষেত্রে বলা যেতে পারে, এতদিন পর্যন্ত আধার কার্ড, ভোটার কার্ড, প্যান কার্ড, রেশন কার্ড করার জন্য বা একটি কার্ডের সঙ্গে আরেকটি কার্ডের লিংক করার জন্য দেশবাসীকে ছুটোছুটি করতে হতো।
এবার সেই তালিকায় নয়া সংযোজন স্মার্ট সিটিজেনশিপ কার্ড। সরকারের তরফে জানানো হচ্ছে এর ফলে ভারতের নাগরিকত্ব প্রমাণে আর কোনো সমস্যা তৈরি হবে না।
Read More:—

