ভারতের নাগরিকত্ব তথা বৈধ নাগরিকত্ব প্রমাণ করা নিয়ে বহুদিন ধরেই চলছে একাধিক বিতর্ক। এই সমস্যার সমাধানের উদ্দেশ্যেই কেন্দ্রীয় সরকারের তরফে ভারতের প্রত্যেকটি বৈধ নাগরিকের জন্য জারি করা হয়েছে Citizenship Smart Card। এই কার্ড বানিয়ে নিলেই নাগরিকদের সমস্ত সমস্যার সমাধান হবে। বর্তমানে ভোটার তালিকা থেকে ভুয়ো নাম বাদ দেওয়ার যে সমীক্ষা শুরু হয়েছে, তাই নিয়ে একাধিক জলঘোলা হচ্ছে দেশজুড়ে।
সম্প্রতি বিহারের ভোটার নিবিড় সমীক্ষায় (Special Intensive Revision) বাদ গিয়েছে ৬৫ লক্ষের নাম। কারণ— সঠিক নাগরিকত্ব প্রমাণ না করতে পারা। ভারতের নির্বাচনী কমিশন জানিয়ে দিয়েছে—
আধার কার্ড বা রেশন কার্ড শুধুমাত্র পরিচয় পত্র হিসেবে ব্যবহার করা যেতে পারে। এটি কোনভাবেই নাগরিকত্বের প্রমাণ দেয় না।
—এ প্রসঙ্গে নির্বাচনী কমিশনের সঙ্গে একমত সুপ্রিম কোর্ট। তাহলে নাগরিকত্ব প্রমাণ হবে কিভাবে? এর উত্তর হল— সিটিজেন কার্ড বা নাগরিকত্ব কার্ড। কীভাবে মিলবে এই কার্ড? জানুন বিস্তারিত।
সিটিজেন কার্ড সম্পর্কে
ভারতবর্ষে ভোটার কার্ডের পাশাপাশি, নাগরিকদের পাসপোর্ট অথবা জন্মের সার্টিফিকেট দিয়ে প্রমাণ করা যায় নাগরিকত্ব। তবে বর্তমানে ভোটার তালিকায় একাধিক ভুয়ো নাম দেখা যাচ্ছে। যে কারণে ভোটার কার্ডকে নাগরিকত্বের প্রমাণ হিসেবে, ব্যবহার করা যাবে না বলে জানাচ্ছে ইলেকশন কমিশন (ECI)।

এই কারণেই দেশজুড়ে শুরু হয়েছে বিশেষ নিবিড় সমীক্ষা বা SIR। নাগরিকত্বের এই ধোঁয়াশা কাটাতেই কেন্দ্রীয় সরকারের পক্ষ থেকে এবার পরিকল্পনা করা হলো Citizenship Smart Card চালু করার। সমস্ত ভারতীয় নাগরিকরা এই কার্ড বানিয়ে নিতে পারবেন। এই একটি কার্ড থাকলেই একাধিক সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে।
সিটিজেন কার্ড থাকার সুবিধা
— ভোটার তালিকা সার্ভে বা স্পেশাল ইনটেনসিভ রিভিশন এর ক্ষেত্রে একটি কার্ডের মাধ্যমেই যাবতীয় তথ্য-প্রমাণ সম্ভব হবে।
— ভারতীয় নাগরিকদের নাগরিকত্ব প্রমাণ করার ফলে এই কার্ড গ্রাহকেরা একাধিক সুযোগ-সুবিধা পাবেন।
— ভোটার তালিকা সংশোধন, অবৈধ ভোটার এবং সঠিক নাগরিকদের সনাক্তকরণে সহায়তা করবে।
— নাগরিকদের বিভিন্ন তথ্য ডিজিটাল ডাটাবেসের সংরক্ষিত থাকবে এবং দ্রুত যাচাইকরণে সাহায্য হবে।
— নাগরিকদের জন্য বিভিন্ন প্রকল্প এবং সুযোগ-সুবিধার ক্ষেত্রে সুরক্ষা ও স্বচ্ছতা নিশ্চিত করবে।
সিটিজেন কার্ডে কোন কোন নথি থাকবে?
এতদিন পর্যন্ত সিটিজেনশিপ কার্ড বা নাগরিকত্বের প্রমাণ হিসেবে নাগরিকত্ব কার্ড নিয়ে আসার একটি জল্পনা চললেও, বর্তমানে বৈধ নাগরিকত্ব প্রমাণের জন্য এটি আবশ্যক হয়ে দাঁড়িয়েছে। কেন্দ্রীয় সরকারের তরফে এমন একটি কার্ড তৈরি করা হচ্ছে, যেখানে—
নাগরিকের নাম, জন্ম তারিখ, জন্মস্থান, ছবি, ডিজিটাল সিগনেচার, সিকিউরিটি ফিচার এবং সেই গুরুত্বপূর্ণ ইউনিক সিটিজেনশিপ নম্বর (Unique Citizenship Number) থাকবে। এই নম্বরের মাধ্যমে অনায়াসেই বৈধ নাগরিকত্ব প্রমাণ করা সম্ভব হবে। সম্প্রতি সিটিজেনশিপ কার্ড সম্পর্কে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের তরফ থেকে সবুজ সংকেত দেওয়া হয়েছে।
নাগরিকত্বের প্রমাণ
বর্তমানে নাগরিকত্ব প্রমাণের জন্য ২৬ জানুয়ারি ১৯৫০ — ১ জুলাই ১৯৮৭ পর্যন্ত ভারতে জন্মগ্রহণকারী ব্যক্তিরা অটোমেটিক্যালি নাগরিক হিসাবে বিবেচিত হন। তাদের নাগরিকত্বের প্রমাণ হিসেবে জন্ম সার্টিফিকেট বা স্কুল সার্টিফিকেটের প্রয়োজন হয়।
যদি কোন ব্যক্তির ০১ জুলাই ১৯৮৭ — ০৩ ডিসেম্বর ২০০৪ এর মধ্যে জন্মগ্রহণ করে থাকেন, তাহলে তাদের বাবা বা মায়ের মধ্যে, যেকোন একজনের নাগরিকত্ব প্রমাণ করলেই ওই ব্যক্তি নাগরিক হিসেবে প্রমাণিত হন।
এর পরবর্তী পর্যায়ে অর্থাৎ ০৩ ডিসেম্বর ২০০৪ এর পরে জন্মালে বাবা-মা দুজনকেই ভারতের নাগরিক হতে হবে। অর্থাৎ, এক্ষেত্রে বাবা-মা দুজনেরই নাগরিকত্ব প্রমাণ করতে পারলে ওই ব্যক্তিকে নাগরিক হিসাবে গ্রাহ্য করা হবে।
আধার,ভোটার ও প্যান নাগরিকত্বর প্রমাণ নয়
সম্প্রতি বিহারের বিশেষ নিবিড় সমীক্ষা নিয়ে সুপ্রিম কোর্টে মামলা দায়ের করা হয়েছে। সুবিচারের লক্ষ্যে দায়ের করা এই মামলায় ইতিমধ্যেই সুপ্রিম কোর্টের তরফে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, ভারতবর্ষে প্রচলিত গুরুত্বপূর্ণ কার্ড যেমন—
- আধার কার্ড (Aadhaar Card)
- রেশন কার্ড (Ration Card)
- ভোটার কার্ড (Voter ID Card)
- প্যান কার্ড (PAN Card)
কোনটিই নাগরিকত্বের প্রমাণ দেয় না। এগুলি শুধুমাত্র সাধারণ মানুষের পরিচয় পত্র।
নাগরিকত্বের প্রমাণ হিসাবে Citizenship Smart Card
কেন্দ্রীয় সরকারের তরফে এবার ভারতবাসীর নাগরিকত্ব প্রমাণের জন্য চালু করা হচ্ছে স্মার্ট কার্ড। এটি কেবলমাত্র জাতীয় পরিচয় পত্র নয় বরং ভারতের সমস্ত বৈধ নাগরিকদের পরিচয় পত্র হিসেবে কাজ করবে Citizenship Smart Card। এটি চালু হলে ভারতের আসল নাগরিকদের দুশ্চিন্তা কমবে এবং সকলেই নিশ্চিন্তে ভারতে বসবাস করতে পারবেন।
সম্প্রতি কেন্দ্রীয় সরকারের তরফে সিটিজেনশিপ স্মার্ট কার্ড নিয়ে বিশেষ উদ্যোগ গ্রহণ করা হচ্ছে। এই স্মার্ট কার্ড বানানোর প্রক্রিয়া ২০২৬ সালের মধ্যে বাস্তবায়নের চেষ্টা করছে কেন্দ্রীয় সরকার। এর জন্য প্রথম ধাপে একটি পাইলট প্রজেক্ট লঞ্চ করা হতে পারে। যদিও এই বিষয়ে এখনও পর্যন্ত সরকারি অফিসিয়াল ঘোষণা করা হয়নি। এই বিষয়ে অফিশিয়াল ঘোষণা প্রকাশ্যে এলে তবেই বিস্তারিত জানা যাবে।
Also Read—

