WB Jago Prakalpo — লক্ষ্মীর ভান্ডার প্রকল্পের পাশাপাশি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উদ্যোগে বিধানসভা নির্বাচনের আগেই নতুন প্রকল্প ঘোষণা করা হলো। এই প্রকল্পে লক্ষ্মীর ভান্ডার (Lakshmir Bhandar) এর মতো ১ হাজার টাকা বা ১২০০/- টাকা নয়, একেবারে পাঁচ হাজার টাকার সহায়তা পাবেন রাজ্যের মহিলারা।
পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের নারীদের সামাজিক উন্নয়ন এবং অত নির্ভর হওয়ার যাত্রায় আরো এক নতুন পদক্ষেপ গ্রহণ করল পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকার। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উদ্যোগে ইতিমধ্যেই পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের মহিলাদের অর্থনৈতিক স্বাবলম্বীকরণের জন্য একাধিক প্রকল্প চালু রয়েছে। তবে বিধানসভা নির্বাচনের আবার মহিলাদের জন্যই এই নতুন প্রকল্প ঘোষণা করলেন মুখ্যমন্ত্রী।
এই প্রকল্পের নাম— “জাগো প্রকল্প”। এই প্রকল্পের মাধ্যমে পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের মহিলাদের অর্থনৈতিক দিক থেকে স্বনির্ভর এবং স্বাবলম্বী করে তোলার প্রচেষ্টা চালাচ্ছে রাজ্য সরকার। আপনি কিভাবে এই প্রকল্পে আবেদন জানাবেন? তার উত্তর বিস্তারিতভাবে মিলবে আজকের প্রতিবেদন থেকে।
জাগো প্রকল্প আসলে কি?
এর আগেও পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকারের তরফে রাজ্যের মহিলাদের স্বনির্ভরতার উদ্দেশ্যে একাধিক প্রকল্প শুরু করা হয়েছিল। এই সমস্ত প্রকল্প গুলি দেশের মধ্যে ইতিহাস তৈরি করেছে। তবে এবারের রাজ্য সরকারের উদ্যোগে শুরু হল— জাগো প্রকল্প। এই প্রকল্পের মাধ্যমে নির্বাচিত মহিলারা এককালীন ৫,০০০/- টাকা অনুদান পাবেন।
প্রকল্পের উদ্দেশ্য
১) মহিলাদের অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী করে তোলা।
২) রাধে আরও অধিক পরিমাণে স্বনির্ভর গোষ্ঠী গঠন করে তাদের কার্যকলাপে অনুপ্রেরণা যোগানো।
৩) রাজ্যের মহিলাদের স্বনির্ভর গোষ্ঠীর মাধ্যমে আরো বেশি সাবলম্বী করে অর্থনৈতিক উন্নতি ঘটানো।
Read More:— শুধু পড়াশোনা করলেই হবেনা! পাশাপাশি এই স্কিল কোর্সগুলি শিখে নাও।
৪) রাজ্যের অর্থনীতিতে মহিলাদের ভূমিকা বৃদ্ধি।
৫) পুরুষদের পাশাপাশি মহিলাদের সমানভাবে কর্ম ক্ষেত্রে এগিয়ে এসে অর্থনৈতিক অগ্রগতিতে সহায়তা করা।
লক্ষ্মীর ভান্ডার V/S জাগো প্রকল্প
পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকারের উদ্যোগে নতুন শুরু করা জাগো প্রকল্প কি তাহলে রাজ্যের লক্ষ্মীর ভান্ডার প্রকল্পের মতোই কাজ করবে? এই বিষয়ে অনেকেই প্রশ্ন তুলেছেন। তবে দুটি প্রকল্পই রাজ্যের মহিলাদের আত্মনির্ভরতার উদ্দেশ্যে তৈরি করা হলেও, উভয় প্রকল্পের মধ্যে কাঠামোগত বড় পরিবর্তন রয়েছে। নিচে প্রকল্প দুটির মূল পার্থক্য উল্লেখ করা হলো—
১) লক্ষ্মীর ভান্ডার প্রকল্পের মাধ্যমে রাজ্য সরকারের তরফে মহিলাদের সম্পূর্ণ নিজস্ব খরচ এবং গৃহস্থালির খরচ নিবারণের উদ্দেশ্যে আর্থিক সহায়তা দেওয়া হয়। অপরদিকে যাব প্রকল্পের মাধ্যমে স্বনির্ভর গোষ্ঠীর আর্থিক শক্তি বৃদ্ধির প্রচেষ্ট চালানো হচ্ছে।
২) লক্ষ্মীর ভান্ডার প্রকল্পের মাধ্যমে বর্তমানে সাধারণ মহিলারা প্রতিমাসে এক হাজার টাকায় এবং তপশিলি জাতি ও উপজাতির মহিলারা প্রতিমাসে ১২০০ টাকা আর্থিক অনুদান পেয়ে থাকেন। জাগো প্রকল্পের ক্ষেত্রে মহিলারা শুধুমাত্র এককালীন ৫ হাজার টাকা পাবেন।
৩) পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের যে কোন স্থায়ী বাসিন্দা নির্দিষ্ট আয়ের সীমা থাকলেই এই প্রকল্পে আবেদন জানাতে পারবেন। অপরদিকে স্বনির্ভর গোষ্ঠীর সদস্য হলে এবং নির্দিষ্ট আর্থিক শর্ত পূরণ করলে তবেই জাগো প্রকল্পের জন্য মনোনীত হতে পারবেন মহিলারা।
জাগো প্রকল্পের বিন্যাস
পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকারের এই নতুন প্রকল্পের মাধ্যমে প্রথম ধাপে রাজ্যের ১০ লক্ষ মহিলাকে একসাথে এই আর্থিক সহায়তা পাওয়ার সুযোগ করে দেওয়া হবে। তবে এর জন্য মহিলাদের অবশ্যই নিম্নলিখিত শর্তগুলি পূরণ করতে হবে-
১) আবেদনকারীকে অবশ্যই পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের স্থায়ী বাসিন্দা হতে হবে।
২) এক্ষেত্রে আবেদনকারী মহিলা স্বনির্ভর গোষ্ঠীর সদস্য না হলে এই প্রকল্পে কোনভাবেই আবেদন জানাতে পারবেন না।
৩) আবেদনকারীর স্বনির্ভর গোষ্ঠী অন্ততপক্ষে ১ বছরের পুরনো হতে হবে।
৪) আবেদনকারীর একাউন্টে অন্ততপক্ষে ৫ হাজার টাকা ব্যালেন্স মজুদ থাকতে হবে।
৫) গোষ্ঠীর ব্যাংক একাউন্টের বয়স কমপক্ষে ৬ মাস হতে হবে।
৬) যে করছে তরফে আপনি আবেদন জানাবেন, সেই গোষ্ঠীকে আগে কোন ক্যাশ ক্রেডিট লিমিট বার শর্তসাপেক্ষা ঋণ গ্রহণ করতে হবে।
জাগো প্রকল্পে আবেদন প্রক্রিয়া
পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের জাগো প্রকল্পতে অন্যান্য প্রকল্পের মতো আলাদা করে আবেদন জানানোর প্রয়োজন নেই। উপরে উল্লেখিত সমস্ত শর্ত পূরণ করলে সরকারের পক্ষ থেকে গোষ্ঠীর একাউন্টে নিজে থেকেই টাকা পাঠানো হবে। এক্ষেত্রে যে গোষ্ঠীকে টাকা পাঠানো হবে, সেই গোষ্ঠীর সমস্ত সদস্যই এই টাকার সমান অংশীদার হবেন।
জাগো প্রকল্পের মাধ্যমে সামাজিক উন্নতি
লক্ষ্মীর ভান্ডার প্রকল্পের মাধ্যমে ইতিমধ্যেই পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের বিপুল সংখ্যক মহিলা সমাজে নিজেদের একটি পরিচিতি তৈরি করতে সক্ষম হয়েছেন। তবে এবারে শুধুমাত্র মহিলাদের স্বনির্ভর করার উদ্দেশ্যেই জাগো প্রকল্পের সূচনা করা হয়েছে।
এই প্রকল্পের মাধ্যমে গ্রামীন অর্থনীতিতে মহিলাদের অবদান বাড়বে এবং মহিলারা ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী হিসাবে সমাজে নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করতে সক্ষম হবেন। লক্ষ্মীর ভান্ডার প্রকল্পের পাশাপাশি জাগো প্রকল্প যে পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের অর্থনীতিতে এক নতুন পরিবর্তন আনতে চলেছে, তা এখন থেকেই আশা করা যায়।

